★সুমনের শরীরে আছে ৩ শতাধিক গুলি।
★ সুস্থ হতে করাতে চান অস্ত্রপাচার।
★পুলিশের ছোড়া গুলিতে কর্মঠ তরুণ এখন পরিবারের বোঝা।
' জুলাই জুরেই ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের আন্দোলন দেখতাম। চোখের সামনে আন্দোলন দেখে আর ঠিক থাকতে পারিনি। মনের টানে আন্দোলনে গিয়ে এখন নিজেই গুলিবিদ্ধ। শরীরে তিন শতাধিক ছররা গুলি। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। অপারেশন করা দরকার। তবুও কেউ খোঁজ নেয়না। ' মঙ্গলবার ( ৮ অক্টোবর) সকালে আক্ষেপ করে কথা গুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার তরুণ মো. সুমন ব্যাপারী (১৮)।
তিনি কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামের তাঁতি আলী হোসেনের বড় ছেলে। গরীব বাবার সংসারে অভাব অনটন থাকায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত গিয়েই ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় সুমনের পড়াশোনা। পরিবারকে সহযোগীতা করতে ১০ হাজার টাকা বেতনে চলতি বছরের মে মাসে তিনি ডেলিভারি ম্যানের কাজ নিয়েছিলেন কুষ্টিয়া থানামোড় সংলগ্ন শিশির বেকারীতে। পরিবারে বাবা, মা ফরিদা বেগমসহ তার ছোট দুই ভাই শুভ (১৪) ও সাব্বির (৬) রয়েছে। তারা পড়াশোনা করে।
সুমন প্রভাত প্রতিদিনকে বলেন, এক তারিখ থেকে পাঁচ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনই আন্দোলনে যেতাম। ৫ আগষ্ট সকাল থেকেই পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের কঠিন সংঘর্ষ চলতে থাকে। দুপরে কুষ্টিয়া সদর থানার সামনে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালায় পুলিশ। আমার পাশের জন সবুজ গলাঁয় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আমি সবুজকে তুলতে গেলে প্রায় পাঁচ হাত দুর থেকে পুলিশ আমাকে অনেক গুলো ছররা গুলি করে। এরপর টিয়ারসেল মারলে আমি অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। আমার পায়ের মাংসপেশি, মাজা, পিছনে তিন শতাধিক গুলি আর রক্ত।'
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে টিনশেড ঘরের কাঁচা বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন সুমন ব্যাপারী। তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। অনেকটায় আনমনে তিনি। পাশের আরেকটা ঘরে যান্ত্রিক তাঁতে লুঙ্গি বুনছেন বাবা। মা সাংসারিক কাজ করছেন।
এসময় সুমন বলেন, হাসপাতালে ৬ দিন রাখার পর রিলিজ দিয়ে চিকিৎসক বলেছিলেন বাড়ি গেলে ঠিক হয়ে যাবে। তিন শতাধিক গুলি নিয়ে বাড়িতে আছি। কিন্তু কই, এতোদিনেও ঠিক হয়নি। সব সময় জ্বলে। রোদে যেতে পারিনা, সোজা হয়ে চলাফেরা করতে পারিনা। যদি সুস্থ হতাম, তাহলে খেলাধূলা, কাজকাম করতে পারতাম। কিন্তু শরীরে অনেক গুলি। সব সময় শুয়ে বসে থাকি। কিছুই করতে পারছিনা। আমি অপারেশন করে শরীর থেকে গুলি গুলো বের করতে চাই।'
সুমনের মা ফরিদা বেগম কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সুমন সব সময় মন খারাপ করে শুয়ে বসে থাকে। কাঁন্নাকাটি করে। বার বার গুলি বের করার কথা বলে। কেউ খোঁজ খবর নেয়না। ওর অপারেশন করানো দরকার।
বাবা আলী হোসেন বলেন, একটা তাঁতের আয়ে চলে পাঁচজনের সংসার। সংসারের খরচ চালাবো, নাকি ওর চিকিৎসা করাবো। এখন তেমন পর্যন্ত তেমন কোনো সহযোগীতা করেনি কেউ। তিনি সুমনের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে সহযোগীতা চেয়েছেন।
এক সঙ্গে অনেক গুলো গুলি। অপারেশন করে বের করার মতো অবস্থা নেয় বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. আকুল উদ্দিন। তিনি বলেন, সুমনকে ওষুধপত্র দেওয়া হয়েছে। এখন কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। একটু সময় লাগবে। তবে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যেতে পারে।প্রয়োজন হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা রাজশাহীতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, সুমনকে পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগীতা করা হয়েছে। সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা আসলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।