কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার কারণে টানা ১০ দিন সারাদেশে বন্ধ ছিল মোবাইল ইন্টারনেট সেবা। অবশেষে রোববার বিকাল পৌনে ৩টার দিক থেকে ধীরে ধীরে এ সেবা চালু করা হয়। ৩টার পর থেকে অধিকাংশ গ্রাহক মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন। তবে ইন্টারনেটে ধীরগতি পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
এদিকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় অনেকে ডাটা প্যাকেজ কিনেও ব্যবহার করতে পারেননি। এজন্য গ্রাহকদের বিনামূল্যে ৫ জিবি ডাটা বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অপারেটরগুলো। তবে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও এখনো গ্রাহকরা বোনাস ৫ জিবি ইন্টারনেট পাননি। কারা, কখন এ বোনাস ইন্টারনেট বিনামূল্যে পাবেন, তা জানতে উদগ্রীব গ্রাহকরা।
তিনটি মোবাইল অপারেটরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালুর পর কারা এ বোনাস ডাটা পাওয়ার ক্ষেত্রে এলিজেবল (যোগ্য), তা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারপর এলিজেবল বা যোগ্য গ্রাহকদের এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের ডাটা প্যাকেজটি চালুও হয়ে যাবে। যখন প্যাকেজটি চালু হবে, তখন থেকে ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিন ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ থাকবে।
গ্রামীণফোন জানায়, গ্রামীণফোনের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সচল হয়েছে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। যে সব গ্রাহকদের ইন্টারনেট প্যাকেজ মেয়াদ শেষ হয়েছে সেই সব গ্রাহকদের ৩ দিন মেয়াদে ৫ জিবি ইন্টারনেট ফ্রি দেওয়া হবে।
গত ১৮ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টার দিকে সারাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়। ওই সময়ের আগে যেসব গ্রাহক ডাটা প্যাকেজ কিনেছিলেন এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ১০ দিন সময়ের মধ্যে মেয়াদকাল শেষ হয়েছে, তারাই কেবল বোনাস ৫ জিবি ইন্টারনেট পাবেন।
তাছাড়া কমপক্ষে ১ থেকে দেড় জিবি ইন্টারনেট অবশিষ্ট ছিল এমন গ্রাহকদের এ বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে বাছাই করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে অপারেটররা। যদিও এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন অপারেটর কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ অহমেদ পলক রোববার সকালে বিটিআরসিতে ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, মোবাইল ইন্টারনেট সক্রিয় হওয়ার পর ইন্টারনেট সেবা চালু হলে গ্রাহকদের ৫ জিবি বিনামূল্যে ডাটা দেওয়া হবে।
তবে অপারেটররা বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় তারাও দ্রুত বোনাস ৫ জিবি ইন্টারনেট ডাটা দেবে। তবে সেটা ঠিক কখন থেকে দেওয়া শুরু হবে, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যখন যাকে এ ডাটা প্যাকেজ বোনাস আকারে দেওয়া হবে, তখনই তাকে এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৮ জুলাই সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন রাত ৯টার দিকে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচদিন পর ২৩ জুলাই রাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে চালু করা হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। ২৫ জুলাই রাত থেকে বাসা-বাড়িতেও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি গুগল ক্যাশ সার্ভার ক্লিয়ার করায় ধীরে ধীরে ইন্টারনেটে স্বাভাবিক গতি ফিরতে শুরু করে।
অন্যদিকে দেশের ১৩ কোটির বেশি মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকরা আরও তিনদিন সেবাবঞ্চিত ছিলেন। তাদের অসুবিধার কথা বিবেচনায় অবশেষে রোববার ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট চালু করল সরকার।