শীতের সকালে সঠিক ব্রেকফাস্ট শুধু দিনটি শুরু করারই নয় বরং শরীরকে সতেজ ও সক্রিয় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীর বেশি ক্যালরি পোড়ায়, তাই সঠিক খাবার নির্বাচন করলে তা আপনাকে সারাদিন এনার্জি দিতে পারে।শীত মৌসুমে আমাদের হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। পানি কম পান করার ফলে শরীর ডিহাইড্রেট হতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে খালি পেটে কিছু জিনিস খেলে শুধু রোগই দূরে থাকে না, সারাদিন এনার্জিতে ভরপুর থাকা যায়।শীতকালে ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। তাই শরীরের দুর্বলতা হ্রাস করাসহ আরও বিভিন্ন ধরনের উপকার পেতে ব্রেকফাস্টে থাকতে হবে স্বাস্থকর খাবার।ডায়াবেটিক রোগীদের ডায়েট চার্ট করে দেয়া হয়। শীতেও তাদের সেই ডায়েট চার্ট মেনে চলা উচিত। এ ছাড়া অন্যান্যদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। তবে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে মধু, তুলসী পাতা, গোল মরিচ ও রসুন ব্যবহার করতে পারেন শরীর বুঝে।
চা পান:
শীতের সকালে বিছানা ছেড়ে কিছুতেই উঠতে মন চায় না। তবে এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিলে সব আলসেমি দূরে পালিয়ে যায়। গ্রিন টি, তুলসী টি, অথবা আদা চায়ের উপকারিতা রয়েছে। এতে যেমন ক্লান্তি দূর হয়, তেমনি শরীরও সতেজ থাকে।
রুটি:
আটার রুটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনই শীতকালে শরীরও গরম রাখে। লাল আটার রুটিতে ফাইবার এবং ভিটামিন বি রয়েছে। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে শরীরে উষ্ণ ভাব এনে দেয়। আর ভিটামিন বি দেহকে উষ্ণ রাখে।
ডিম:
গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে ডিম খেলে শরীরের নানা সমস্যা দূরে থাকে। তাই সিদ্ধ, হোক বা পোচ প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবার প্রতিদিনের সকালে খেতেই হবে। ডিমে প্রোটিন ছাড়াও ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ রয়েছে।
মিক্সড ভেজিটেবল:
মিক্সড ভেজিটেবলে প্রায় সব ধরনের ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবার থাকে। বিভিন্ন রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম এই সবজি। ত্বকের লাবণ্য ফিরে আনতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
স্যুপ:
স্যুপ খুবই স্বাস্থকর একটা খাবার। প্রতিদিন সকালে না হলেও যেকোনো একটা সময়ে স্যুপ খান। এতে শরীরে শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ঠান্ডা দূর করে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখে।
মৌসুমি ফল:
চিকিৎসকদের মতে, কিছু ফল রয়েছে যেগুলো শীত মৌসুমে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মৌসুমি ফল অবশ্যই রাখুন।
মধু:
শীতকালে মধুর কোনো বিকল্প নেই। গলার খুসখুস কমানোর পাশাপাশি মধু ঠান্ডা দূর করে মধু। প্রতিদিন এক চামচ করে মধু খেলে শীতকাল সুস্থভাবে পারবেন! মধুর মধ্যে প্রাকৃতিক এনজাইম, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। মধু দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে।
দুধ:
শীতে স্বাস্থ্যের খুব যত্ন নিতে হয়। তা না হলে অনেক সমস্যা বেড়ে যায়৷ আর দুধের পুষ্টিগুণ কারও অজানা নয়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ অবশ্যই রাখুন। দুধে যে প্রোটিন থাকে তা শরীরের জন্য উপকারী।
কর্নফ্লেক্স:
পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকরা গুরুত্ব দেন দিনের প্রথম খাবারের প্রতি। ব্রেকফাস্টের পরিমাণ ও খাদ্যবস্তুটির প্রতি সব সময়ই সচেতন থাকতে বলেন তারা। প্রতিদিন একঘেয়েমি খাওয়ার খেতে কারওই ভালো লাগে না। তাই মাঝে মধ্যে কর্নফ্লেক্স খান। এর মধ্যে ফল মিশিয়েও খেতে পারেন।
ব্রাউন ব্রেড:
সাদা ব্রেডের চেয়ে ব্রাউন ব্রেড অনেক বেশি উপকারী। তাই সাদা ব্রেড ভুলে ব্রাউন ব্রেড খান। ব্রাউন ব্রেড গমের আটা, পানি, লবণ, চিনি এবং ইস্ট ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এটি গমের আটার জীবাণু এবং তুষ ধরে রাখে।
ওটস:
ওটস খাওয়া শরীরের পক্ষে খুবই ভালো। ওজন এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যায় ভোগলে সকালে আপনার অবশ্যই ওটস খাওয়া উচিত। এটি আপনার শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং আপনার অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। কম ক্যালরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত ওটস আপনার পেটকে দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখবে। ওটস অনেকভাবেই খেতে পারেন। দুধ দিয়ে, খিচুড়ি করে যেটা ভালো লাগে সেভাবেই খেতে পারেন।
কলা:
ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর ফল কলা খেতে পরামর্শ দেন চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদরা। প্রতিদিনের ব্রেকফাস্টে কলা অবশ্যই রাখুন। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন কলা খান। কলা খেলে পেট ভরার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে আসে দারুণ এনার্জি।
মাখন:
শরীরে কম-বেশি সব উপাদানই প্রয়োজন। তাই মাখনেরও চাহিদা রয়েছে। শীতে ব্রেকফাস্টে অবশ্যই মাখন খান। মাখন দিয়ে হালকা টোস্ট করে খেতে পারেন।
সুজি:
সুজি পুষ্টিকর খাবার। সুজি দিয়ে অনেক রকম খাবার বানিয়ে খেতে পারেন। ঝাল হোক কিংবা মিষ্টি দুরকমভাবেই সুজি খাওয়া যায়। এতে পেটও যেমন ভরা থাকবে, তেমনি শরীরও ভালো থাকবে।
কিছু টিপস:
সুস্থ থাকতে শীতের সকাল শুরু করুন স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে। সতেজ ও সক্রিয় থাকুন সারা দিন।